ঠগী শব্দটি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের একটি বিশেষ অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি ঐতিহাসিকভাবে সেই গোষ্ঠীগুলিকে নির্দেশ করে, যারা ঠগ বা ছদ্মবেশী অপরাধী ছিল। তাদের কার্যক্রম এবং ঐতিহাসিক প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা যাক।
ঠগীদের পরিচিতি
ঠগীরা ছিল একটি সংগঠিত গোষ্ঠী, যারা ভারতবর্ষে মূলত ১৩শ থেকে ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত সক্রিয় website ছিল। তারা ভ্রমণকারীদের আস্থায় এনে পরে তাদের হত্যা করত এবং তাদের সম্পদ লুট করত। ঠগী শব্দটি এসেছে হিন্দি শব্দ ঠগা থেকে, যার অর্থ প্রতারক বা ছদ্মবেশী।
ঠগীদের কর্মকাণ্ড
ঠগীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত। তারা সাধারণত দলে দলে চলত এবং নির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করত। তাদের কৌশলগুলির মধ্যে ছিল:
মিথ্যা পরিচয় দেওয়া: তারা নিজেদের ধর্মভীরু ভ্রমণকারী বা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিত।
আস্থা অর্জন করা: ভ্রমণকারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করত।
হত্যার কৌশল: ঠগীরা সাধারণত একটি বিশেষ ধরণের রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করত, যা দিয়ে শ্বাসরোধ করে ভিকটিমদের হত্যা করত।
দেহ লুকানো: হত্যার পর মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো, যাতে কেউ তাদের সন্ধান না পায়।
ঠগী এবং ধর্মীয় বিশ্বাস
ঠগীদের মধ্যে অনেকেই কালীর উপাসক ছিল। তারা মনে করত, তাদের কর্মকাণ্ড দেবী কালীর প্রতি একটি উৎসর্গ। এই বিশ্বাস তাদের হত্যা এবং লুটপাটকে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে উপস্থাপন করত।
ব্রিটিশ শাসনামলে ঠগীদের নির্মূল
ঠগীদের কার্যক্রম ১৯শ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটিশ শাসকদের নজরে আসে। উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান নামে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা ঠগীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে ঠগী গোষ্ঠীর বহু সদস্য গ্রেপ্তার হয় এবং ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর ফলে ঠগী প্রথার অবসান ঘটে।
ঠগীদের ঐতিহাসিক প্রভাব
ঠগীরা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলেনি, বরং তাদের গল্প পরবর্তীতে সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে।
Comments on “ঠগী”